SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - খাদ্য ও পুষ্টি | NCTB BOOK

শর্করা বা শ্বেতসার
আমরা নাস্তায় রুটি, মুড়ি, চিড়া, পাউরুটি ইত্যাদি খাই। এগুলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। শর্করা শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলোর মধ্যে শর্করার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। শর্করা সহজপাচ্য। সব শর্করাই কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এই তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। শর্করা দেহের কর্মক্ষমতা যোগায়। গ্লুকোজ এক ধরনের সরল শর্করা।

চিত্র ১৩.১ : শর্করা জাতীয় খাদ্য

রাসায়নিক গঠনপদ্ধতি অনুসারে সব শর্করাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একটি মাত্র শর্করা অণু দিয়ে গঠিত হয় মনোস্যাকারাইড। একে সরল শর্করাও বলে। দ্বি-শর্করা ও বহু শর্করা পরিপাকের মাধ্যমে সরল শর্করায় পরিণত হয়ে দেহের শোষণযোগ্য হয়। মানবদেহ পরিপুষ্টির জন্য সরল শর্করা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানবদেহ শুধুমাত্র সরল শর্করা গ্রহণ করতে পারে। গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, গ্যালাকটোজ এ তিনটি শর্করার মধ্যে গ্লুকোজ রাষ্ট্রের মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয়।

শর্করা, স্নেহ ও পার্মিকের মধ্যে শর্করা সর্বাপেক্ষা সহজপাচ্য। দেহে শোষিত হওয়ার পর শর্করা খুব কম সময়ে তাপ উৎপন্ন করে দেহে শক্তি যোগায়। ১ গ্রাম শর্করা ৪ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে। মানবদেহে প্রায় ৩০০-৪০০ গ্রাম শর্করা জমা থাকতে পারে। এ পরিমাণ শর্করা ১২০০-১৬০০ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে দেহের শক্তি যোগায়।

ব্যাস, দেহের ওজন, উচ্চতা, পরিপ্রমের মাত্রার উপর শর্করার চাহিদা নির্ভর করে। একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের দৈনিক শর্করার চাহিদা তার দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের ৪.৬ গ্রাম হয়ে থাকে। একজন ৬০ কেজি ওজনের পুরুষ মানুষের গড়ে দৈনিক শর্করার চাহিদা (Sox৪-৬) গ্রাম বা ২৭৬ গ্রাম। আমাদের মোট প্রয়োজনীয় ক্যালরির শতকরা ৬০-৭০ ভাগ শর্করা হতে গ্রহণ করা দরকার।

কাজ : শর্করা বা শ্বেতসারের উপস্থিতি নির্ণর

প্রয়োজনীয় উপকরণ : এরারুট প্রবণ বা ভাতের মাড়, টেস্ট টিউব, আয়োডিন, পানি ও ড্রপার 

পদ্ধতি : সামান্য পরিমাণ এরারুট দ্রবণ বা ভাতের মাড় একটি টেস্টটিউবে নাও এবং এর সাথে সামান্য পরিমাণ পানি মেশাও। এবার এর ভিতর দুই-তিন ফোঁটা আয়োডিন দ্রবণ মেশাও। কী ঘটে দেখ? প্রবণটি নীল বর্ণ ধারণ করবে। এ থেকে উক্ত প্রবণে শর্করা বা শ্বেতসারের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

অভাবজনিত রোগ
আহারে কম বা বেশি শর্করা গ্রহণ উতাই দেহের জন্য ক্ষতিকর। শর্করার অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে দেহে বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে হাইপোপ্লাইমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।

যেমন— ক্ষুধা অনুভব করা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ঘামানো, কৃৎকম্পন বেড়ে বা কমে যাওয়া।

 

নামিব বা প্রোটিন
আমিষ আমাদের দেহের গঠন উপাদান। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও সালফারের সমন্বয়ে আমিষ পঠিত। আমিষে ১৬% নাইট্রোজেন থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানে আমিব একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। আমিষ হলো অ্যামাইনো এসিডের একটি জটিল যৌগ পরিপাক প্রক্রিয়া যারা এটি দেহে শোষণ উপযোগী অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়। এ পর্যন্ত প্রকৃতিজাত দ্রব্যে ২২ প্রকার অ্যামাইনো এসিডের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালাগুলো সাজিয়ে যেমন অসংখ্য শব্দ গঠন করতে পারি, তেমনি ২২টি অ্যামাইনো এসিড বিভিন্ন সংখ্যায়. বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে মিলিত হয়ে আমিষের উৎপত্তি ঘটায়। এ কারণে মাছ, দুধ, মাংস ইত্যাদি খাবারের স্বাদ, পদ্ম ও বর্ণের তারতম্য দেখা যায়।

চিত্র ১৩.২: আমিষ জাতীয় খাদ্য

দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও নাইট্রোজেনের সমতা রক্ষার জন্য অ্যামাইনো এসিড অত্যন্ত প্রয়োজন। কিছু কিছু অ্যামাইনো এসিডকে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড বলে। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড দেহে তৈরি হয় না। খাদ্য থেকে এ অ্যামাইনো এসিডগুলো সংগ্রহ করতে হয়।

অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডের অভাব ঘটলে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন— বমি বমি ভাব, মূত্রে জৈব এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় না থাকা ইত্যাদি।

সব আমিষ দেহে সমান পরিমাণে শোষিত হয় না। আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার পর এর শতকরা যত ভাগ অস্ত্র থেকে দেহে শোষিত হয় ভদ্র ভাগকে সেই আমিবের সহজপাচ্যতার গুণক ধরা হয়। সহজপাচ্যতার উপর আমিষের পুষ্টিমান নির্ভর করে। যে আমিষ শতকরা ১০০ ভাগই দেহে শোষিত হয় এবং দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে কাজ করে তার সহজপাচ্যতার গুণক ১। এক্ষেত্রে আমিষ গ্রহণ এবং দেহের ধারণের পরিমাণ সমান। সহজ অর্থে বলতে গেলে যতটুকু আমিষ গ্রহণ করা হয় তার সম্পূর্ণটাই দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে কাজ করে। আর তা না হলে সহজপাচ্যতার গুণক ১ হতে কম হয়। মায়ের দুধ ও ডিমের আমিষের সহজপাচ্যতার গুণক ১। অন্যান্য সব আমিষেরই সহজপাচ্যতার গুণক ১ হতে কম।

কাজ : আমিষের উপস্থিতি নির্ণয়

প্রয়োজনীয় উপকরণ : ডিমের সাদা অংশ, হামানদিস্তা, পানি, টেস্টটিউব, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, কপার সালফেট
পদ্ধতি : সামান্য পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাদ্য (ডিমের সাদা অংশ) হামানদিস্তার সাহায্যে পিষে ফেলতে
হবে। ভালো করে পিষে ফেলার জন্য সামান্য পরিমাণ পানি মেশানো যেতে পারে। এবার টেস্টটিউবে সামান্য পরিমাণ আমিষের দ্রবণ নাও। উক্ত দ্রবণে কয়েক ফোঁটা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের দ্রবণ এবং কয়েক ফোঁটা কপার সালফেট দ্রবণ মেশাও। এতে উক্ত দ্রবণে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছ কি?
আমিষের দ্রবণের সাথে রাসায়নিক দ্রব্যগুলো মিশানোর পর দ্রবণটি বেগুনি রং ধারণ করেছে। এভাবে উক্ত
দ্রবণে আমিষের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

 

আমিষের অভাবজনিত রোগ
খাদ্যে পরিমিত প্রয়োজনীয় জৈব আমিষ বা মিশ্র আমিষ না থাকলে শিশুর দেহে আমিষের অভাবজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগলে দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিশুদের কোয়াশিয়রকর ও মেরাসমাস রোগ দেখা দেয়।

 

কোয়াশিয়রকর রোগের লক্ষণ
• শিশুদের খাওয়ায় অরুচি হয়।
• পেশি শীর্ণ ও দুর্বল হতে থাকে, চামড়া এবং চুলের মসৃণতা ও রং নষ্ট হয়ে যায়।
• ডায়রিয়া রোগ হয়, শরীরে পানি আসে।
• পেট বড় হয়।

উপযুক্ত চিকিৎসার দ্বারা এ রোগ নিরাময় হলেও দেহে মানসিক স্থবিরতা আসে। কোয়াশিয়রকর রোগ মারাত্মক হলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

 

মেরাসমাস রোগের লক্ষণ 

• আমিষ ও ক্যালরি উভয়েরই অভাব ঘটে, ফলে দেহের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। 

• শরীর ক্ষীণ হয়ে অস্থিচর্মসার হয়। 

• চামড়া বা ত্বক খসখসে হয়ে ঝুলে পড়ে।

• শরীরের ওজন হ্ৰাস পায়৷

শিশুদের জন্য এরূপ অবস্থা বিপজ্জনক। এছাড়া প্রোটিনের অভাবে বয়স্কদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও রক্তভা দেখা দেয়।

Content added || updated By